ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে অনুসন্ধান দল। সেখানে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়েছে।
পুরো হেলিকপ্টারটি ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
পরিস্থিতি “ভালো নয়” বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেন কলিভান্দ।
মি. কলিভান্দ জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টারটির অবস্থানে পৌঁছাবে।
জায়গাটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে।
এর আগে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার এলাকায় একটি ‘হিট সোর্স’ (উত্তপ্ত স্থান) সনাক্ত করেছে তুরস্কের পাঠানো ড্রোন।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এই তথ্য জানিয়েছে।
তবে, এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি বা তার সফরসঙ্গীদের অবস্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবির ক্যাপশান,হেলিকপ্টারে করে তাবরিজ শহরে যাচ্ছিলেন এব্রাহিম রাইসি
রোববার আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে দুটি বাঁধ উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি।এরপর হেলিকপ্টারে ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ান।
তাদের সাথে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম থাকতে পারেন বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-র বরাতে জানিয়েছে।
তাবরিজ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
ফার্স নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদকের মতে, হেলিকপ্টারটি যেখানে “অবতরণ” করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে ভারী কুয়াশা থাকায় অনুসন্ধান অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার দৃষ্টিসীমা মাত্র পাঁচ মিটারে নেমে এসেছে।
পূর্ব আজারবাইজানের ডেপুটি গভর্নর ফর ডেভেলপমেন্ট আলি জাকারি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান “ওই বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল এবং অন্য দুটি নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছে। একটি বিধ্বস্ত হয়েছে।”
নিরাপদে ফেরা হেলিকপ্টারে জ্বালানি মন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ান এবং আবাসন ও পরিবহনমন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ ছিলেন।
ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, হেলিকপ্টারের ভেতরে প্রেসিডেন্টের সাথে থাকা লোকজন জরুরি কল করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন, হেলিকপ্টারের সাথে রেডিও যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে তিনি এর বাইরে আর কোনও ব্যাখ্যা দেননি।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, মি. রাইসিকে বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার বহন করছিল। এই মডেলটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পরে যুক্তরাষ্ট্রের এটি ইরানের কাছে বিক্রি করার কথা নয়। সে হিসেবে উড়োযানটি অন্তত ৪৫ বছরের পুরনো।
এর আগেও আকাশপথে দুর্ঘটনায় দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন সময়ে পরিবহনমন্ত্রী, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
এব্রাহিম রাইসি একদিন আগে প্রতিবেশী আজারবাইজানে ছিলেন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মরালিটি বা নৈতিকতা বিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।
তাকে একজন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ কারণে তিনি সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েছেন।
বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সাথে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
অনেকে মনে করেন তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।
২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা তাকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন।
মি. রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮-সদস্যের এই বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে। সূত্র: বিবিসি।