পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ইউপি চেয়ারম্যানকে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তার ডান পা গুড়িয়ে দেয়ার পর ছাত্র দল নেতার দায়েরকৃত হত্যা চেষ্টা মামলা রুজু করে তাকেই গ্রেফতার করলো পুলিশ। পুলিশের এমন ভূমিকায় বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা নিয়ে ফের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগেও আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ওই চেয়ারম্যানের পা পিটিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের হামলায় সোমবার (২৬ আগষ্ট) সন্ধ্যায় মুমূর্ষ অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কলাপাড়া হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনছার উদ্দিন মোল্লাকে।
লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা জানান, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে ৫০/৬০ জনের একদল দুর্বৃত্ত লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে চেয়ারম্যানকে খুঁজতে থাকে। চেয়ারম্যান আত্মরক্ষার জন্য কোন রকম ভাবে উপরের তলায় উঠে গেট বন্ধ করে দিলে দুর্বৃত্তরা গেট ভেঙে তার কক্ষে ঢুকে তাকে লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাথারি ভাবে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে হাত পা চেপে ধরে তার ডান পা গুঁড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এবং রক্তাক্ত অবস্থায় কক্ষের মেঝেতে ফেলে রাখে তাকে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আনছার উদ্দিন মোল্লাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হলেও পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিতে বিলম্বিত করে এবং রাতে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা রুজু করে তাকে গ্রেফতার করে হাসপাতালে নেয়। কলাপাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে সাথে সাথে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করে দেয় বলে জানায় সূত্রটি।
সূত্রটি আরও জানায়, সোমবার বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চেয়ারম্যান কাউকে মারধর করেছে বলে তারা দেখেনি।
গুরুতর আহত আনছার উদ্দিন মোল্লার পরিবার সূত্র জানায়, ৪০/৫০ জন বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানের উপর হামলা চালায়। পরে প্রশাসন এসে তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ তাকে উদ্ধার না করে উল্টো মূমূর্ষ অবস্থায় গ্রেফতার করে চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্বিত করে।
এদিকে লতাচাপলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাসেল শিকদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে আলীপুর বাজারে আসার সময় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনছার মোল্লার নেতৃত্বে আমাকে হত্যা চেষ্টায় হামলা করা হয়। খবর পেয়ে বিএনপি’র লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। বর্তমানে আমি কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি আছি। হামলার সময় আনছার উদ্দিন নেশা করে মাতাল অবস্থায় ছিল। তবে তার উপরে কেউ হামলা চালিয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।’
ছাত্রদল সভাপতি রাসেল আরও বলেন, ‘সোমবার রাতেই ৩৪ জনকে আসামি করে আমি মহিপুর থানায় মামলা করেছি। মামলায় অজ্ঞাত আসামী রয়েছে আরও ৫০/৬০ জন।’
মহিপুর থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আনসার উদ্দিন মোল্লাকে ছাত্রদল সভাপতি রাসেল শিকদার হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পুলিশ পাহারায় বরিশালে চিকিৎসাধীন। একটু সুস্থ হলেই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’